6:24 am, Monday, 23 December 2024

পানির দাম এক লাফে ৩০ শতাংশ বাড়ানোর উদ্যোগ

Monzu-Info-Tech
Monzu-Info-Tech

পানি সরবরাহে ভর্তুকি কমাতে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য এক লাফে ৩০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। একই সঙ্গে বাণিজ্যিক গ্রাহকের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে ৫০ শতাংশ। ওয়াসার দাবি, বর্তমানে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে পানি সরবরাহ করছে সংস্থাটি। এজন্য ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ভর্তুকি কমাতে গত ২৭ মার্চ গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতে পানির দাম বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

 

গত ১৬ এপ্রিল প্রতিবেদনটি চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রেজুলেশন হলেই সেটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দাবি, বর্তমানে এক হাজার লিটার পানি উৎপাদন করতে খরচ হচ্ছে ৩২ টাকা। এই পানি সরবরাহ করে আবাসিক গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ১৮ টাকা এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকের কাছ থেকে ৩৭ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে ওয়াসার পানির মূল্য বৃদ্ধির খবরে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। মূল্য বৃদ্ধির খড়গ গিয়ে পড়বে নগরীতে বসবাসরত ৮০ শতাংশ ভাড়াটিয়ার ওপর। অথচ সেবা সংস্থাটি পানি বিক্রির মাধ্যমে লাভবান থাকা সত্ত্বেও এক লাফে ৩০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবকে অযৌক্তিক হিসাবে বলছেন অনেকে।

চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছর ধরে গরম এলে পানির উৎপাদন কমে যায়। পানি যতটুকু আসে, তাও লবণাক্ত। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকদের কেনা পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। চলতি বছর ১০ মার্চ থেকে এক ধাক্কায় ৭ থেকে ৮ কোটি লিটার উৎপাদন কমে যায়।

এর মধ্যেই পানির দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আসায় এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। গ্রাহকরা পানির মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। লবণাক্ততার জন্য হালিশহর, উত্তর ও দক্ষিণ পতেঙ্গা, কাটগড়, বাকলিয়া, কর্নেলহাট, আকবর শাহ, পাহাড়তলীসহ একাধিক এলাকায় সংকট তৈরি হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসার আবাসিক গ্রাহক সংযোগ রয়েছে ৭৮ হাজার ৫৪২টি ও বাণিজ্যিক সংযোগ ৭ হাজার ৭৬৭টি। নগরের প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয়। চট্টগ্রাম ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক কাজী শহিদুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বৃদ্ধি করার নিয়ম রয়েছে। তবে ২০২১ সালের পর গত তিন বছর তা করা হয়নি। এই সময়ের মধ্যে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি শোধনের ব্যয় সামাল দিতে মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। রেজুলেশন হলে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এ প্রসঙ্গে ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ঢাকা ওয়াসা এক হাজার লিটার পানি ১৫ টাকায় সরবরাহ করছে। অথচ চট্টগ্রাম ওয়াসা নিচ্ছে ১৮ টাকা। এরপরও দাম বাড়ানো অযৌক্তিক। তাছাড়া এমন এক সময় ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যখন সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেশি। এমনিতেই সাধারণ মানুষ আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামাল দিতে গিয়ে দিশেহারা। এর মধ্যে নতুন করে পানির দাম বৃদ্ধি হলে আরও কষ্টে পড়ে যাবে। এর মাশুল সাধারণ ভাড়াটিয়াদের দিতে হবে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, এক হাজার লিটার পানি উৎপাদন করতে খরচ হচ্ছে ৩২ টাকা। অথচ আমরা বিক্রি করছি ১৮ টাকায়। বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। সেই ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলে লোন আটকে যাবে। প্রতিষ্ঠানের ভারসাম্য ঠিক রাখতে পানির মূল্য বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

About Author Information

Bangladesh Diplomat বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট

Bangladesh Diplomat | বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট | A Popular News Portal Of Bangladesh.

পানির দাম এক লাফে ৩০ শতাংশ বাড়ানোর উদ্যোগ

Update Time : 07:44:52 am, Saturday, 4 May 2024

পানি সরবরাহে ভর্তুকি কমাতে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য এক লাফে ৩০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। একই সঙ্গে বাণিজ্যিক গ্রাহকের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে ৫০ শতাংশ। ওয়াসার দাবি, বর্তমানে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে পানি সরবরাহ করছে সংস্থাটি। এজন্য ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ভর্তুকি কমাতে গত ২৭ মার্চ গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতে পানির দাম বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

 

গত ১৬ এপ্রিল প্রতিবেদনটি চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রেজুলেশন হলেই সেটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দাবি, বর্তমানে এক হাজার লিটার পানি উৎপাদন করতে খরচ হচ্ছে ৩২ টাকা। এই পানি সরবরাহ করে আবাসিক গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ১৮ টাকা এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকের কাছ থেকে ৩৭ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে ওয়াসার পানির মূল্য বৃদ্ধির খবরে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। মূল্য বৃদ্ধির খড়গ গিয়ে পড়বে নগরীতে বসবাসরত ৮০ শতাংশ ভাড়াটিয়ার ওপর। অথচ সেবা সংস্থাটি পানি বিক্রির মাধ্যমে লাভবান থাকা সত্ত্বেও এক লাফে ৩০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবকে অযৌক্তিক হিসাবে বলছেন অনেকে।

চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছর ধরে গরম এলে পানির উৎপাদন কমে যায়। পানি যতটুকু আসে, তাও লবণাক্ত। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকদের কেনা পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। চলতি বছর ১০ মার্চ থেকে এক ধাক্কায় ৭ থেকে ৮ কোটি লিটার উৎপাদন কমে যায়।

এর মধ্যেই পানির দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আসায় এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। গ্রাহকরা পানির মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। লবণাক্ততার জন্য হালিশহর, উত্তর ও দক্ষিণ পতেঙ্গা, কাটগড়, বাকলিয়া, কর্নেলহাট, আকবর শাহ, পাহাড়তলীসহ একাধিক এলাকায় সংকট তৈরি হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসার আবাসিক গ্রাহক সংযোগ রয়েছে ৭৮ হাজার ৫৪২টি ও বাণিজ্যিক সংযোগ ৭ হাজার ৭৬৭টি। নগরের প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয়। চট্টগ্রাম ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক কাজী শহিদুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বৃদ্ধি করার নিয়ম রয়েছে। তবে ২০২১ সালের পর গত তিন বছর তা করা হয়নি। এই সময়ের মধ্যে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি শোধনের ব্যয় সামাল দিতে মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। রেজুলেশন হলে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এ প্রসঙ্গে ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ঢাকা ওয়াসা এক হাজার লিটার পানি ১৫ টাকায় সরবরাহ করছে। অথচ চট্টগ্রাম ওয়াসা নিচ্ছে ১৮ টাকা। এরপরও দাম বাড়ানো অযৌক্তিক। তাছাড়া এমন এক সময় ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যখন সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেশি। এমনিতেই সাধারণ মানুষ আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামাল দিতে গিয়ে দিশেহারা। এর মধ্যে নতুন করে পানির দাম বৃদ্ধি হলে আরও কষ্টে পড়ে যাবে। এর মাশুল সাধারণ ভাড়াটিয়াদের দিতে হবে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, এক হাজার লিটার পানি উৎপাদন করতে খরচ হচ্ছে ৩২ টাকা। অথচ আমরা বিক্রি করছি ১৮ টাকায়। বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। সেই ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলে লোন আটকে যাবে। প্রতিষ্ঠানের ভারসাম্য ঠিক রাখতে পানির মূল্য বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।