আজ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন মহাঅষ্টমী। শারদীয় দুর্গাপূজার অন্যতম প্রধান এ দিনটি পূর্ণ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পালিত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে। আজকের মূল আকর্ষণ ‘কুমারী পূজা’, যেখানে এক কুমারী বালিকার মধ্যেই ভাবা হয় দেবীর উপস্থিতি।
এ দিন সকালে মহাঅষ্টমী পূজার মাধ্যমে শুরু হয় দিনের আনুষ্ঠানিকতা। অগ্নি, বায়ু, বস্ত্র, পুষ্প ও মাল্যসহ পাঁচটি উপকরণে দেবী দুর্গাকে পূজা জানানো হয়। সনাতনী নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ সবাই নির্জলা উপবাস থেকে দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন।
রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে প্রতিবারের মতো এবারও হাজারো ভক্ত-অনুরাগীর উপস্থিতিতে কুমারী পূজা আয়োজিত হচ্ছে। রামকৃষ্ণ মিশনের তথ্যমতে, আজ সকাল ১১টায় কুমারী পূজা শুরু হয়ে চলবে দুপুর ১টা পর্যন্ত। এর আগে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে মহাষ্টমী পূজা শুরু হয়, পুষ্পাঞ্জলি হয় সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে এবং মধ্যাহ্ন প্রসাদ বিতরণ করা হবে দুপুর ১২টায়। সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হবে সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে এবং শেষ হবে ৭টা ১ মিনিটে।
শাস্ত্র মতে, কুমারী পূজার সূচনা হয়েছিল কোলাসুর নামের এক অসুরকে হত্যা করার ঘটনা থেকে। কোলাসুর স্বর্গ ও মর্ত্য দখল করে ফেললে বিপন্ন দেবতারা শরণাপন্ন হন দেবী মহাকালীর। দেবীর কৃপায় এক মানবকন্যা জন্ম নিয়ে কোলাসুরকে কুমারী অবস্থায় বধ করেন। এই ঘটনার স্মরণেই মর্ত্যে প্রতি বছর মহাঅষ্টমীতে কুমারী পূজা পালিত হয়।
পুরোহিতদর্পণসহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী, কুমারী পূজার জন্য জাত, ধর্ম বা বর্ণভেদ নেই। তবে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী সাধারণত ব্রাহ্মণ কুমারী কন্যাকেই পূজার জন্য বেছে নেওয়া হয়। এক থেকে ১৬ বছর বয়সী মেয়েরা কুমারী পূজার যোগ্য বলে ধরা হয়, তবে অনেকক্ষেত্রে ২ থেকে ১০ বছর বয়সী বালিকাদের মধ্যেই এই পূজা সীমাবদ্ধ থাকে।
শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলেছেন, “সব স্ত্রীলোকই ভগবতীর এক একটি রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ ঘটে।” এই দর্শনের ভিত্তিতেই আজও দুর্গাপূজার অষ্টমী বা নবমীতে এক কুমারীকে প্রতিমার পাশে বসিয়ে দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়।