চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি জব্দের উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ জন্য দেশটিতে পাঠানো হচ্ছে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর)।
দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানান, দুদকের আবেদনের ভিত্তিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর আদালত এ সম্পদ জব্দের নির্দেশ দেন। ওই আদেশ অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে এমএলএআর পাঠাচ্ছে দুদক।
দুদকের নথি অনুযায়ী, জয়ের নামে ভার্জিনিয়ায় দুটি বাড়ি রয়েছে। এর একটি গ্রেট ফলস এলাকায়, যার ২০২৪ সালের ৩ জুনের মূল্যায়ন অনুযায়ী দাম ৩৮ লাখ ৭৯ হাজার ৫৬০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪৫ কোটি টাকা)। অন্যটি ফলস চার্চ এলাকায়, ২০১৪ সালে যার দাম ধরা হয় ৯ লাখ ৯৬ হাজার ৮৭৫ ডলার (প্রায় ৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা)। সব মিলিয়ে বাড়ি দুটির মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৫৩ কোটি টাকা।
এ ছাড়া তদন্তে দেখা যায়, জয়ের নামে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত আটটি বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মার্সিডিজ-বেঞ্জ এস-ক্লাস (২০১৫), ম্যাকলারেন ৭২০ এস (২০১৮), ল্যান্ড রোভার (২০১৬) ও লেক্সাস জিএক্স ৪৬০ (২০১৫)। গাড়িগুলোর আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা এবং আদালত ইতোমধ্যেই এগুলো জব্দের অনুমোদন দিয়েছে।
দুদকের নথি বলছে, জয়ের নামে অন্তত ১২টি ব্যাংক হিসাব ও ছয়টি কোম্পানি পাওয়া গেছে। এসব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে গোল্ডেন বেঙ্গল প্রডাকশন্স এলএলসি, প্রাইম হোল্ডিং এলএলসি, ওয়াজেদ ইন অসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনার্স এলএলসি, ব্লু হ্যাভেন ভেঞ্চারস এলএলসি ও ট্রুপে টেকনোলজিস এলএলসি। ব্যাংক হিসাবগুলোর মধ্যে সাতটি এসব প্রতিষ্ঠানের নামে এবং পাঁচটি ব্যক্তিগত। এর মধ্যে একটি যৌথ হিসাবে খোলা হয়েছে তার সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে।
গত ১৪ আগস্ট সজীব ওয়াজেদের বিরুদ্ধে ৬০ কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক। মামলায় বলা হয়, ২০০০ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন এবং হুন্ডি ও অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেন।
দুদক জানিয়েছে, জয়ের বিরুদ্ধে বিদেশি আয় গোপন, অনুমোদনবিহীন বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং সন্দেহজনক লেনদেন পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। আদালতে প্রমাণ দাখিলের জন্য জব্দ করা এসব সম্পদ আলামত হিসেবে উপস্থাপন করা হবে।
দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, “তদন্ত চলমান রয়েছে। আদালতের অনুমতি অনুযায়ী প্রয়োজনে আরও সম্পদ জব্দ করা হবে এবং বিচার প্রক্রিয়ায় এসব সম্পদ উপস্থাপন করা হবে।”