বিশ্বজুড়ে দায়িত্ব পালনরত শত শত মার্কিন জেনারেল ও অ্যাডমিরালকে হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্রে তলব করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় এক জরুরি বৈঠকে অংশ নিতে তাদের ডেকেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। তবে এ বৈঠকের উদ্দেশ্য বা আলোচ্যসূচি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এই খবর জানায়। মার্কিন গণমাধ্যমগুলো প্রথমে বিষয়টি প্রকাশ করলে পরে পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পারনেল এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি একেবারেই অস্বাভাবিক ঘটনা, কারণ মার্কিন সামরিক বাহিনীতে প্রায় ৮০০ জেনারেল ও অ্যাডমিরাল রয়েছেন, যাদের অনেকেই বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল ঘাঁটিতে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের সময়সূচি সাধারণত কয়েক সপ্তাহ বা মাস আগেই নির্ধারিত থাকে। ফলে এত স্বল্প সময়ে একসঙ্গে এত উর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাকে ডাকা ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
এক সামরিক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, “এখন সবাই সময়সূচি বদলাতে হিমশিম খাচ্ছেন এবং ভাবছেন, এই বৈঠকে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক কি না।”
এ প্রসঙ্গে পেন্টাগনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী সপ্তাহের শুরুতেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী তার জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। তবে আলোচনার বিষয়বস্তু এখনো গোপন রাখা হয়েছে।
এদিকে হোয়াইট হাউসে এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “আমি এটা ভালোবাসি। জেনারেল আর অ্যাডমিরালদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকা জরুরি। আমি তো শান্তির প্রেসিডেন্ট, সম্পর্ক ভালো থাকা ক্ষতিকর নয়।”
এ বিষয়ক সমালোচনার জবাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, “যেসব জেনারেল প্রতিরক্ষামন্ত্রীর অধীনে কাজ করেন, তাদের সঙ্গে বৈঠক করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সাংবাদিকরা অহেতুক প্রশ্ন তুলছে।”
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ পেন্টাগনে বড় ধরনের পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে যৌথবাহিনী প্রধান জেনারেল সিকিউ ব্রাউনসহ একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
চলতি বছরের মে মাসে ট্রাম্প নির্দেশ দিয়েছিলেন, চার-তারকা জেনারেলের সংখ্যা ২০ শতাংশ কমাতে হবে এবং সামগ্রিকভাবে জেনারেল ও ফ্ল্যাগ অফিসারের সংখ্যা ১০ শতাংশ হ্রাস করতে হবে।
পাশাপাশি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ সেনাবাহিনীতে বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির বিরোধিতা করে, এসব কর্মসূচি থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। তাঁর মতে, এখন সময় “যোদ্ধা মনোভাব” ফিরিয়ে আনার এবং সেনাবাহিনীকে “প্রাণঘাতী শক্তি বৃদ্ধির” দিকে মনোনিবেশ করার।
এ মাসের শুরুতেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক নির্দেশে প্রতিরক্ষা দপ্তরের নাম ‘ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার’ হিসেবে ব্যবহারের ঘোষণা দেন, যা ১৯৪৯ সালের আগ পর্যন্ত ব্যবহৃত হতো। তবে স্থায়ী নাম পরিবর্তনের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
এতসব পরিবর্তনের পটভূমিতে এই রহস্যময় বৈঠক নিয়ে নানা প্রশ্ন ও আলোচনা তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক ও সামরিক মহলে।